জেএসসিঃ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়- সৃজনশীল
জেএসসি
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
প্রশ্ন ১ : একটি কোম্পানির কিছু লোক ‘ক’ নামক রাষ্ট্রে মসলার ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসা লাভজনক হলে তারা সেখানে শিল্পকারখানা গড়ে তোলে। এতে অন্য বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আধিপত্য নিয়ে ওই কোম্পানির কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কোম্পানি জয় লাভ করে আরও শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। তারা নিজেদের স্বার্থেই ‘ক’ দেশে স্কুল, কলেজ স্থাপন করে যা পরবর্তীতে ওই দেশবাসীর কল্যাণ বয়ে আনে।
ক. উইলিয়াম হেজেজ কে ছিলেন? ১
খ. ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ কী? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের কোম্পানির সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের কোন কোম্পানির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. কোম্পানির শেষোক্ত কার্যক্রমের সঙ্গে ঔপনিবেশিক যুগের কোন জাগরণমূলক ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? তার প্রভাব বিশ্লেষণ কর। ৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ইউলিয়াম হেজেজ ছিলেন বাংলার ইংরেজ কোম্পানিগুলোর গর্ভনর।
খ. ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর বাংলার রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। রাজস্বের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে তা আদায়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এর ওপর ১৭৬৮ সাল থেকে তিন বছরের অনাবৃষ্টির ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা। এটিই ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।
গ. উদ্দীপকের কোম্পানির সঙ্গে পাঠ্যপুস্তরের ইংরেজ কোম্পানির মিল রয়েছে। আমরা জানি, ইউরোপের কোনো কোনো দেশে খনিজ বাণিজ্যিক বিকাশের ফলে অর্থনীতি তেজী হয়ে উঠেছিল। এর ফলে ১৪শ’ শতক থেকে ইউরোপে যুগান্তকারী বাণিজ্য-বিপ্লবের সূচনা হয়। তখন একদিকে তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সংগঠনগুলো শক্তিশালী হতে শুরু করে আর অন্যদিকে কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রীর জন্য বাজারের সন্ধানও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-ডা-গামা দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে পৌঁছে ভারতবর্ষকে বিশ্ব-বাণিজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার মধ্য নিয়ে আসেন। আর দক্ষ নাবিক আল বুকার্ক ভারত মহাসাগরের কর্তৃত্ব অধিকার করে এক কথায় পুরো ভারতের বহির্বাণিজ্য করায়ত্ত করে নেন। ১৬৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হয়। একে বলে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি। এটি সম্পাদিত হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি নতুন উদ্যমে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষ। আবার তার মধ্যে বাংলার সিল্ক ও অন্যান্য মিহি কাপড় এবং মসলা তাদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে; যার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ইংরেজ কোম্পানির কথা বলা হয়েছে।
ঘ. কোম্পানির শেষোক্ত কার্যক্রমের সঙ্গে ঔপনিবেশিক যুগের নবজাগরণের সাদৃশ্য রয়েছে।
ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেশীয়দের মধ্য থেকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেণি তৈরিতে মনোযোগ দেয়। ১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এর একটা বাড়তি লক্ষ্য ছিল চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে রাজ্য হারানো ক্ষুব্ধ মুসলমানদের সন্তুষ্ট করা। এরই ধারাবাহিকতায় হিন্দুদের জন্য ১৭৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সংস্কৃত কলেজ। ইংরেজদের উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে।
১৮২১ সালে শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনও বাংলার মানুষের মনকে মুক্ত করা ও জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রেও আরেকটি পথ খুলে দেয়। এতে বইপুস্তক ছেপে জ্ঞানচর্চাকে শিক্ষিত সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া ও স্থায়িত্ব দেয়ার পথ সুগম হয়। এ সময় সংবেদনশীল মানুষের নজর যায় সমাজের দিকে। সমাজের অনাচার নিয়ে যেমন তারা আত্মসমালোচনা করেছেন তেমনি শাসকদের অবিচারের বিরুদ্ধেও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। বাংলাভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করে জনমত সৃষ্টিতে এগিয়ে আসেন অনেকে।
বাঙালির এই নবজাগরণ কলকাতা মহানগরীতে ঘটলেও এর পরোক্ষ প্রভাব সারা বাংলাতেই পড়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনামলের আধুনিক শিক্ষা ও জাগরণের আরেকটি দিক হল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ। সেই সঙ্গে এর ফলে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার বোধেরও উন্মেষ ঘটতে থাকে।
Post a Comment