একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিঃ ছোট গল্প লেখা-(কৃতজ্ঞতার মূল্য)
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ছোট গল্প লেখা-(কৃতজ্ঞতার মূল্য)
প্রশ্ন: ‘কৃতজ্ঞতার মূল্য’ বিষয় নিয়ে খুদে গল্প লেখো।
সকাল বেলায়ই বাসা থেকে রোজ বেরিয়ে যায় কাদের।..................................................................
মানুষ
সকালবেলায়ই বাসা থেকে রোজ বেরিয়ে যায় কাদের... ছুটির দিন কী জিনিস, তা সে জানে না। শুধু জানে, এক দিন কাজে না গেলে উপোস করে থাকতে হবে সারা দিন। সেই ১৪ বছর বয়স থেকেই তার এই ছুটে চলা শুরু। এরপর শুধু ছুটছে আর ছুটছে। আদৌ কি কোনো দিন সে এই ক্লান্ত জীবন থেকে রেহাই পেতে পারবে? স্বপ্নগুলোকে কি কোনো দিন বাস্তবে রূপ দিতে পারবে? এসব চিন্তা করতে করতে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে সে, এক মিনিট দেরি হলেও যে কথা শুনতে হবে সরদারের কাছ থেকে।
শ্রমিকদের সরদার জমির মিয়া। তাদের সব কাজ তদারক করে সে। বদরাগী হলেও মানুষ হিসেবে ভালো জমির মিয়া। কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করে না সে।
কম বয়সেই মা-বাবাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে যাওয়া কাদেরের জীবন ছিল দুঃখ-দৈন্য, অভাব-অনটনে জর্জরিত। জমির মিয়া তাদের বস্তিরই অন্য একটা ঘরে থাকত। এই জমির মিয়াই তাকে শ্রমিকের চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় পাটকলে। তখন থেকেই তাকে গুরু হিসেবে মেনে নিয়েছিল কাদের। জীবনে যা-ই সে অর্জন করুক না কেন, জমির মিয়ার কৃতিত্বের কথা অকপটেই স্বীকার করে কাদের।
এক দিন পাটের বস্তার হিসাব মেলানোর সময় জমির দেখল, ১০টি বস্তা কম আছে। অথচ ডেলিভারির সময় প্রায় শেষ। শ্রমিকেরাও ততক্ষণে যার যার বাড়িতে চলে গেছে। ম্যানেজার সাহেব এসে সবকিছু দেখে জমিরের ওপরই সন্দেহ করলেন। মাল ডেলিভারি সঠিক সময়ে না হওয়ায় কোম্পানির ক্ষতি হলো। কোনো প্রমাণ ছাড়াই জমির মিয়াকে চাকরিটা হারাতে হলো। আসল অপরাধী আড়ালেই রয়ে গেল। কাদেরের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কাজটি জমির মিয়া করেনি। কিন্তু তাকে সাহায্য করার মতো কোনো প্রমাণও তার কাছে ছিল না। দারিদ্র্যের সংসারে চাকরি ছাড়া জমির মিয়াও ভয়াবহ অভাবে পড়ল।
কাজ শেষে প্রতিদিন একসঙ্গেই বাড়ির পথ ধরে শ্রমিকেরা। গল্প করতে করতে তাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল কাদেরও। হঠাত্ করেই তার চোখ পড়ল জসিমের ওপর। সেও একই পাটকলের শ্রমিক। কাউকে কিছু না বলে দলছুট হয়ে অন্য পথ ধরল সে। কাদেরের সন্দেহ হলো তার ওপর। সে গোপনে তার পিছু নিল। জসিমের পিছু নিতে নিতে কাদের পৌঁছাল একটি অন্ধকার গলির শেষ মাথায়। সন্ধ্যার দিকে এই দিকটা খুব ফাঁকা থাকে, লোকজনের চলাচল নেই বললেই চলে। কাদের আঁচ করতে পারল, জসিমের নিশ্চয়ই কোনো কুমতলব আছে। সে একটা খুঁটির পেছনে লুকিয়ে জসিমের কর্মকাণ্ড দেখতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর একটা লোক এল জসিমের সঙ্গে দেখা করতে। লোকটা বেঁটে। গায়ে কালো জ্যাকেট। কাদের তাদের কথাবার্তা নিঃশব্দে শুনতে চেষ্টা করল। সবকিছু শুনে সে বুঝতে পারল আজ রাতে তারা চুরি করার পরিকল্পনা করছে। প্রায় ৩০ বস্তা মাল, কথাটি শুনে তার সন্দেহ আরও জোরালো হয়।
তখনই কাদেরের খেয়াল হলো যে এই চুরির ব্যাপারটা কয়েক দিন আগের চুরির মতোই। চট করে একটা বুদ্ধি বের করল সে। পুরো ঘটনা ম্যানেজার সাহেবকে জানিয়ে তারা দুজন ওই রাতে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে পাটকলের স্টোর রুমেই লুকিয়ে থাকল।
রাত ১২টার দিকে জসিম এল। সঙ্গে ওই লোকটা। তারা মালগুলোর কাছাকাছি যেতেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলল। আগের চুরিটা যে জসিমই করেছে, পুলিশের জেরায় তাও বেরিয়ে এল। পরদিন জমির মিয়া তার হারানো চাকরিটা ফিরে পেল। কাদেরও ম্যানেজারের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছিল। ক্ষুধার অনল জ্বালা থেকে কাদেরকে বাঁচিয়েছিল জমির মিয়া। আজ সেই ঋণ সে শোধ করতে পেরেছে—এই ভেবে মন আনন্দে ভরে উঠল কাদেরের। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ এখন কাদের।
Post a Comment