একাদশ শ্রেণিঃ সমাজবিজ্ঞান প্রথম পত্র
একাদশ শ্রেণিঃ সমাজবিজ্ঞান প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন
দ্বিতীয় অধ্যায়
সমাজবিজ্ঞানীদের মতবাদ ও অবদান
উদ্দীপকটি পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
অধ্যাপক আসিফ স্যার সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে একজন বিখ্যাত মনীষীর জীবনকর্ম সম্পর্কে আলোচনাকালে বলেন, এ মনীষী মনস্তত্ত্বভিত্তিক সমাজবিজ্ঞানের ধারার অন্যতম ধারক ছিলেন এবং তিনি প্রথম জীবনে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তী সময় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন।
ক) অগাস্ট কোঁত কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
খ) স্পেন্সার কিভাবে সমাজকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
গ) আসিফ স্যারের বক্তব্যে যে সমাজবিজ্ঞানীর পরিচয় ফুটে উঠেছে তার সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও।
ঘ) ওই সমাজবিজ্ঞানীর আদর্শ নমুনা তত্ত্বটি উদাহরণসহ বিশ্লেষণ করো।
ক) অগাস্ট কোঁত ১৭৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
খ) হার্বার্ট স্পেন্সার সাদৃশ্য স্থাপনের মাধ্যমে সমাজকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্পেন্সারের মতে, প্রতিটি সমাজ হলো জীবদেহের মতো একটি চলমান সত্তা। প্রতিটি জীব যেমন তার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ দ্বারা সম্পর্কিত ক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহকে সচল রাখে, তেমনি সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্নমুখী কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজকে টিকিয়ে রাখে।
গ) আসিফ স্যারের বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের পরিচয় ফুটে উঠেছে। তিনি শ্রেণিকক্ষে যে মনীষীর কথা বলেছেন, প্রথম জীবনে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তী সময় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন। এ ছাড়া তিনি ছিলেন মনস্তত্ত্বভিত্তিক সমাজবিজ্ঞানের ধারার অন্যতম ধারক। এই আলোচনা ম্যাক্স ওয়েবারকে নির্দেশ করে।
ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, সামাজিক ক্রিয়া হলো সমাজবিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু। তিনি সামাজিক ক্রিয়া বলতে মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্রিয়াকে বুঝিয়েছেন। তিনি মানব ক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন : যথা—যৌক্তিক ক্রিয়া, ভাবগত ক্রিয়া ও ঐতিহ্যগত ক্রিয়া। তার যৌক্তিক ক্রিয়া মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত একটি বিষয়। অন্যদিকে ভাবগত ক্রিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যক্তির আবেগ দ্বারা নির্ধারিত হয়। আর ঐতিহ্যগত ক্রিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উভয়ই সামাজিক প্রথা, প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি, লোকাচার ইত্যাদি দ্বার নির্ধারিত হয়ে থাকে।
তাই বলা যায়, ম্যাক্স ওয়েবারের সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের এক অন্যতম অংশ।
ঘ) উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা তত্ত্বটি উদাহরণসহ বিশ্লেষণ করা হলো।
আদর্শ নমুনা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক বাস্তবতাকে অনুধাবন করার প্রচেষ্টা ওয়েবারের সমাজবিজ্ঞানের একটি মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়। তিনি সমাজ অধ্যয়নে আদর্শ নমুনাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ওয়েবারের সামাজিক প্রপঞ্চ আলোচনা করতে গিয়ে আদর্শ নমুনা প্রয়োগ করেছেন। তবে এ আদর্শ নমুনা সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা এটি গবেষকের মনে থাকে। আদর্শ নমুনা দ্বারা সামাজিক সমস্যা বোধগম্য হয়ে ওঠে। তাঁর মতে, সামাজিক কোনো ঘটনার ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করতে হলে প্রথমে সেই ঘটনার বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং একটি কাল্পনিক রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর দেখতে হবে এর সঙ্গে বাস্তবতার কতটুকু মিল বা অমিল রয়েছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনার মাধ্যমে সামাজিক বাস্তবতা অনুধাবন করা যায়। তাই এটি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত।
Post a Comment